সরাইলে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে অফিস সময়ে তালা ক্ষুদ্ধ সেবা বঞ্চিত রোগীরা, সুধাংশোকে শোকজ
অফিস সময় সকাল ৮টা। ঘড়ির কাটায় সকাল ১১ টা। অসহায় দরিদ্র বৃদ্ধ মহিলা পুরুষ রোগীরা ঘুরছে। ভেতরেও প্রবেশ করার সুযোগ নেই। কারন প্রধান ফটকেই ঝুলছে
তালা। ৪ জনের মধ্যে আছেন ২ জন। সেই ২ জনের ১ জনও তখন পর্যন্ত আসেননি। অবশেষে তালা বদ্ধ ফটকের সামনের সিঁড়িতে বসে চলে অপেক্ষার পালা। মাথা ব্যাথা। জিহবায় ঘাঁ। কারো শর্দি। কারো কাশি। কয়েকজন মহিলার কূলে শিশু। কখন আসবেন ফার্মাসিস্ট সুধাংশো? দিবেন ঔষধ। আসলেন না সুধাংশো। ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীরা। চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন বাড়িতে। হঠাৎ করে এমএল এস এস রফিক এসে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করতে লাগলেন। কারনটা বুঝতে পারছিলেন না রোগীরা। দুপুর ১২টায় আচমকা একজন মহিলা ও ১জন পুরুষ লোক প্রবশ করলেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ভয়ে কাঁপছেন রফিক। সকাল ১১টায় প্রতিবেদককে হাজিরা খাতা না দেখাতে চাইলেও এখন দ্রুত বের করছেন খাতা। দৌঁড়ে আনছেন অন্যান্য রেজিষ্ট্রাার। ফার্মাসিস্ট সুধাংশোকে শোকজ করেন কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার সকালে সরাইল উপজেলার শাহাজাদাপুর পল্লী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সরেজমিনে ধরা পড়ে এমন চিত্র। গত ১২ নভেম্বর দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় “শাহজাদাপুরে চেয়ার টেবিলে ধুলার স্তুপ” শিরোনামে প্রকাশিত প্রদিবেদনে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রেরে সেবার নমুনা, ঔষধ চুরি, অনিয়ম দূর্নীতির চিত্র বিশদ আকারে তুলে ধরা হয়। তখন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেছিলেন খুঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ৩ দিন পরই আবারও সুধাংশোর ফাঁকি। অফিস সময়ে বন্ধ হাসপাতাল। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের বক্তব্য তাহলে সুধাংশো কি এভাবে কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই চাকুরি করবে? সেবা যদি না-ই পেলাম, এখানে হাসপাতালের দরকার কি?গতকাল বুধবার সরজমিনে দেখা যায়, শাহজাদাপুর পল্লী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। অফিস সময় সকাল ৮টা হলেও ৯টা থেকেই আসতে থাকে রোগী। কিন্তু হাসপাতালে তো কেউ নেই। ভবনের সামনে রোদেই ঘুরাফেরা করছেন বৃদ্ধ রোগীরা। কেউ কাশছেন, কেউ ঝিমুচ্ছেন আবার অনেকেই ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন। ডাক্তার দেখে একটু ঔষধ দিয়ে দিবেন। এমন আশায় তারা এখানে ঘুরছেন। সকাল ১১ টা পর্যন্ত হাসপাতালের কারো দেখা পেল না রোগীরা। তাপর ফটকের সামনের সিঁড়িতে বসে চলে অপেক্ষার পালা। বারবার তারা রাস্তার দিকে চেয়ে ডাক্তারের অপেক্ষায় আশায় বুক বাঁধছেন। সাড়ে ১১টার পর ক্ষোভে ফেঁটে পড়লেন তারা। চিৎকার করে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মোঃ আজহারের কাছে চিকিৎসা না পাওয়ার বিষয়টি জানালেন ভুক্তভোগীরা। আজহার যাওয়ার পর লুঙ্গি পড়া অবস্থায় হাসপাতালে দৌঁড়ে আসেন রফিক। কোথায় ছিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে রফিক বলেন বাজারের একটি ফার্মেসিতে। পোনে ১২টার দিকে রফিক প্রধান ফটকের তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। প্রতিবেদক ও ইউপি সদস্যকে হাজিরা খাতা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন রফিক। বলেন সরাইলের স্যারের অর্ডার লাগব। হাসপাতালে আসা রোগী রহিমা বেগম (৪০), বৃদ্ধ ধুম সোহাগ (৭০), শশরো রানী (৫০), জোহুরা বেগম (৫৫) ও সুশেলামা (৩৫) সহ অন্য রোগীরা বলেন, এখানে কোন সময়ই ডাক্তার পায় না।
তাদেরকে পাওয়াটা লটারির মত। তারপর আমরা গরীব। আমাদেরকে ঔষধ ও দেয় না। সরকার এত বড় ভবনে রেখে তাদেরকে বেতন দেয় কেন? বাড়িঘরের সকল কাজ ফেলে সকাল থেকে ৩ ঘন্টা বসে রইলাম। চিকিৎসা তো দূরের কথা। তালার কারনে ভিতরে প্রবেশ করতেই পারলাম না। এমন ঘটনা এখানে নিয়মিত। হায়রে স্বাস্থ্য সেবা! সরকার অযথা এখানে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা খরচ করার কোন দরকার নেই। এটা একবারে বন্ধ করে দিলেই ভাল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আচমকা হাসপাতালে গিয়ে হাজির হন টিএইচও ডা: হাসিনা আক্তার বেগম, মেডিকেল টেকনোলজি (এমটি) মোঃ আল-আমীন মিয়া ও স্বাস্থ্য সহকারি কাজল চন্দ্র বিশ্বাস। ফার্মাসিস্ট সুধাংশো তখনও অফিসে অনুপস্থিত। পরিদর্শনে ঘটনার সত্যতা পেয়ে যান তারা। ইউপি সদস্য মোঃ আজহার মিয়া বলেন, এখানে কোন সেবা নেই। আছে শুধু ঔষধ চুরি ও সময় পাস করে বেতন উত্তোলনের চিন্তা। ২০-২৫ দিন পরপর এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ও রেজিষ্ট্রারে আন্দোগোন্দু নাম লিখে ঔষধ নিয়ে দেয় চম্পট। আমাদের কথায় তারা পাত্তাই দিতে চায় না। শাহজাদাপুর গ্রামের বাসিন্ধা ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খাদেম ক্ষোভের সাথে বলেন, এখানে কোন চিকিৎসা নেই। আছে শুধু বাণিজ্য। এখানকার জনগনের একটি পয়সার ও কাজে আসছে না এ হাসপাতাল। যে ২-১ জন ষ্টাফ আছে তারা আসে না। মাসে ১-২ বার আসলেও স্বাক্ষর করে আর ঔষধ নিয়ে চলে যায়। সরকারি এই ঔষধ তাদের আত্মীয় স্বজনদের ফার্মেসিতে বিক্রি করে দেয়। একাধিক ব্যক্তি বলেন, সুধাংশোকে এখান থেকে বদলি করার জন্য ইচ্ছে করেই সে অপকর্ম করছে। তাকে বদলি না করে শাস্তি দেওয়া উচিৎ। অভিযুক্ত ফার্মাসিস্ট সুধাংশোর মুঠোফোনে (০১৭১৪-৯৯১১৮৮) একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তৃতীয়বার ফোনটি রিসিভ করেন সিমান্তী চৌধুরী নামের এক মহিলা। তিনি বলেন আমি সুধাংশোর স্ত্রী। উনি (সুধাংশো) সকালেই অফিসে চলে গেছেন।সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হাসিনা আকতার বেগম সুধাংশোর অফিস ফাঁকি অনিয়ম দূর্নীতির ঘটনা স্বীকার করে বলেন, গতকাল আমি খবর পেয়েই দ্রুত ওই হাসপাতালে যায়। আমি সুধাংশোকে পায়নি। সে ছুটি নেয়নি। আমি আগেও কফিয়ত তলব করেছিলাম। তার বেতনও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারন জানতে আজও (গতকাল) তাকে শোকজ করেছি।
Comments
Post a Comment